তৈয়বুর রহমান কিশোর,বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। হত দরিদ্র, নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্তদের। উপজেলা চত্বরে ওএমএস ডিলারের দোকানে প্রতিদিনই দেখা যায় নারী পুরুষের ভিড়। পৌর সদরের অন্য তিনটি কেন্দ্রেও একই ভিড় বলে জানা গেছে। চাহিদা দেখে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন উপজেলা খাদ্য বিভাগ।

উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বোয়ালমারী খাদ্য বিভাগ খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু করেন। চাল বিক্রির জন্য পৌরসভার মধ্যে চারজন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদ চত্বর, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীর সামনে,
ডাকবাংলো রোড, আঁধারকোঠা আনোয়ারা মডেল একাডেমি খোলা বাজারের চাল বিক্রি করা হচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ডিলার প্রতি ২ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও ১৭ অক্টোবর থেকে বরাদ্দ কমিয়ে ১ মেট্রিক টন বা এক হাজার কেজি করা হয়। একজন ক্রেতা সবোর্চ্চ ৫ কেজি করে চাল কিনতে পারেন। জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে ক্রেতাকে চাল ক্রয় করতে হয়। ক্রেতা প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা দরে ক্রয় করেন। খাদ্য বিভাগ ডিলারের নিকট বিক্রি করে ২৮.৫০ টাকা করে। আগে আটা দেওয়া হলেও এখন উপজেলা পর্যায়ে আটার বরাদ্দ নেই। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই দেওয়া হয় চাল।
উপজেলা পরিষদ চত্বরে খোলা বাজারের চাল বিক্রি করেন ডিলার শিমুল বিশ্বাস। প্রতিদিনই এখানে সকাল থেকে চাল নিতে লাইনে দাড়ান অনেক মানুষ। লাইনের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। লাইনে দাড়ানো প্রনেত্রি রানীর স্বামী ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন। আগে ওএমএসের চাল না কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে। পুনরায় আটা দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। ছোলনা গ্রামের হাজেরা বেগম বলেন, এক সময় ওএমএসের চাল মানুষ বাড়ির পশুপাখিকে খাওয়ানোর জন্য নিতো। কিন্তু এখন মানুষই এই চাল খাচ্ছে। অনেক ভালো ভালো পরিবারের লোকজনও এখন এ চাল কিনছে। বরাদ্দ কম হওয়ায় প্রতিদিনই লাইনে দাড়ানো নিয়ে ঝামেলা হয়। লাইনের শেষ মাথার অনেকেই চাল না পেয়ে ফিরে যান বাসায়। এলাকায় নিজের দোকান আছে, চাষের জমিও আছে এমন একজনকেও চাল নিতে দেখা গেলো। তিনি অবশ্য কথা বলতে রাজি হননি।
ডিলার শিমুল বিশ্বাস বরাদ্দ বাড়িয়ে পুনরায় ২ মেট্রিক টন করার দাবি করেন। তিনি বলেন, ৫ কেজি করে ২০০ জন নিলেই এক টন চাল শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন অনেক মানুষ চাল না পেয়ে ফিরে যায়। তিনি আরও বলেন, চাল ডালসহ দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরাও এখানে চাল নিতে আসছে। কেউ আবার নিজেরা আসেনা কিন্ত অন্যদের দিয়ে চাল ক্রয় করান। আবার বিশ্ব মন্দা এবং দুর্ভিক্ষের আশংকায় অনেকে চাল কিনে মজুদ করার জন্যও ওএমএস এর চালের চাহিদা বেড়েছে।
খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোজাম্মেল হোসেন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কম মূল্যে ভালো মানের চাল দেওয়ার কারণেই ওএমএস এর চালের চাহিদা বেড়েছে। আবার বাজারে আটার মূল্যও বেশি। তাই যারা রুটি খেতো তাদের অনেকেই ভাত খাওয়া শুরু করেছে। বরাদ্দ বৃদ্ধি করার বিষয়টি তিনিসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে জানান।  উপজেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মোশারেফ হোসাইন বলেন, প্রতিদিনই তিনি উপজেলা চত্বরে চাল বিক্রির ওখানে প্রচুর ভিড় দেখতে পান। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তিনি জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়টি জানাবেন।